বাংলাদেশে শীতের তীব্রতা যত বাড়ছে, ততই সারা দেশের তাপমাত্রা কমে আসার হার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি) ঠান্ডা দিন এবং রাতের পূর্বাভাস দিয়েছে। আগামী সপ্তাহগুলোতে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) রাতে প্রকাশ করা সর্বশেষ ৭২ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, রাতের তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে, এবং দিনের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
গভীর রাত এবং ভোরের দিকে কিছু এলাকায় হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশাসহ আবহাওয়া বেশিরভাগ শুষ্ক থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি মৌসুমী নিম্নচাপ ব্যবস্থা এবং উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে এর সম্প্রসারণ এই পরিস্থিতিতে অবদান রেখেছে, যা আরও সাধারণ শীতকালীন আবহাওয়ার রূপান্তরকে তুলে ধরে।
আরও পড়ুন: কুড়িগ্রামে কমছে তাপমাত্রা, বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতের তীব্রতা
পাঁচ দিনের বর্ধিত পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা আরও কমতে পারে, যা দেশজুড়ে শীতকে আরও তীব্র করে তুলবে।
মাঝারি শীতের সময় ডিসেম্বর
ডিসেম্বর বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন শুরু হয়। এই সময়টিতে শুষ্ক পরিস্থিতি, ঠান্ডা রাত এবং স্নিগ্ধ দিন থাকে।
আন্তর্জাতিক আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর মতে, বেশিরভাগ অঞ্চলে দিনের গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। এসময় রাতের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেটের মতো শহরগুলোতে কম আর্দ্রতার মাত্রা এবং প্রচুর রোদ অনুভূত হয়। এর ফলে বাইরের কাজকর্ম এবং ভ্রমণের জন্য আবহাওয়া অনুকূল হয়।
আরও পড়ুন: শীতকালে গরম পানির গিজার: জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, মডেল, ধরন ও দাম
ঢাকা: দিনের তাপমাত্রা সাধারণত ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করে থাকে।
চট্টগ্রাম: উপকূলীয় শহরটিতে হালকা শীতকালীন আবহাওয়া বিরাজ করে। তাপমাত্রা ১৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত থাকে।
সিলেট: পার্বত্য অঞ্চলের জন্য পরিচিত সিলেটে শীতকালীন আবহাওয়া অনুভূত হয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসে।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্য
বাংলাদেশে শীতকাল উৎসব ও কৃষিকাজের ঋতু। কৃষকরা এই সময়কে কাজে লাগিয়ে অনুকূল পরিবেশে ধান ও সবজি চাষ করে থাকেন।
শহর এবং গ্রামীণ অঞ্চলগুলো একইভাবে শীতল আবহাওয়াকে বরণ করে নেয়। আয়োজন করে মেলা, বিবাহ এবং বাইরের অনুষ্ঠানগুলো পুরোদমে চলছে।
তবে, শীতের রাত এবং সম্ভাব্য কুয়াশা ঝুঁকিপূর্ণ সম্প্রদায়ের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে উত্তরের জেলাগুলোতে তাপমাত্রা কম থাকে।
কুয়াশার কারণে দৃশ্যমানতা কমে যেতে পারে এমন সময় ভ্রমণকারীদের ভোরের দিকে সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাসিন্দা এবং দর্শনার্থীদের জন্য পরামর্শ
আবহাওয়া অধিদপ্তর সন্ধ্যায় এবং ভোরের জন্য হালকা জ্যাকেট(গরম কাপড়) পরার পরামর্শ দেয়। আবহাওয়ার পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ থাকার পরামর্শ দেয় সংস্থাটি। বিশেষ করে যারা দীর্ঘ দূরত্বে ভ্রমণ করেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
কক্সবাজার, সুন্দরবন এবং সিলেটের চা বাগানের মতো প্রধান ভ্রমণ গন্তব্যগুলো মনোরম আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি অনাবিল পরিবেশ উপভোগ করতে আন্তর্জাতিক দর্শনার্থীদের এই সময়ে বাংলাদেশ ঘুরে দেখতে উৎসাহিত করা হয়।
শীতের ঠান্ডা তীব্রতর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সাংস্কৃতিক উদযাপন এবং উত্তাপ থেকে বহুল প্রত্যাশিত অবকাশের ঋতুকে বরণ করতে প্রস্তুত হচ্ছে বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন: শীতকালে নিরাপদে মোটরসাইকেল চালকদের প্রয়োজনীয় সেফটি গিয়ার ও পোশাক